বর্তমান প্রতিদিন ডেস্ক:
গম, চিনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর এবার খাদ্য সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চাল রপ্তানিতে লাগাম টানতে যাচ্ছে ভারত। দেশীয় বাজারে চাল সহজলভ্য করতে ও দামবৃদ্ধি ঠেকাতে ভারত এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির কয়েকটি সূত্র।
বৃহস্পতিবার (২৬মে) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে, গম এবং চিনির রপ্তানি বন্ধ করার পর ভারতের পরবর্তী খাদ্য সুরক্ষামূলক পদক্ষেপের লক্ষ্য হতে পারে চাল। আর ভারত এমন পদক্ষেপ নিলে তা বিশ্বজুড়ে প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
ইয়েস ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ রাধিকা পিপলানি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে গম রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। চাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ ধরনের সব পদক্ষেপ খাদ্যের দাম কমিয়ে দেবে কিনা এবং কতদিন পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে এখন সেটিই দেখার বিষয়।
চাল রপ্তানির নিষিদ্ধের পরিকল্পনার ব্যাপারে জানতে ভারতের খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানায় ব্লুমবার্গ।
চীনের পর বিশ্বে চালের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশ ভারত এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে চাল রপ্তানি করেছে। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাঁচটি পণ্যের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গম এবং চিনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
নয়াদিল্লির সূত্রগুলো জানিয়েছে, চাল রপ্তানির সর্বোচ্চ সীমা চিনির মতো এক কোটি টন নির্ধারণ করা হতে পারে। দেশটির সরকার ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। চলতি বছরে মুদ্রাস্ফীতির হার গত আট বছরের সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশে পৌঁছেছে।
ভারতীয় দৈনিক ইকোনমিক টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে, সরকার দেশের বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত এবং দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে চাল রপ্তানি সীমিত করার কথা বিবেচনা করতে পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি বাসমতি ব্যতীত অন্যান্য জাতের চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন বিশ্লেষণ করছে। দাম বৃদ্ধির কোনও লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশটির সরকারি একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পত্রিকাটি এসব তথ্য জানিয়েছে।
ভারতের চাল রপ্তানিকারকদের সংগঠন রাইস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বি. ভি. কৃষ্ণ রাও বলেন, দেশে বর্তমানে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে এবং রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা অথবা বিধি-নিষেধ আরোপের দরকার নেই।
কৃষ্ণ রাও বলেছেন, তারপরও যদি সরকার কিছু পরিমাণে রপ্তানি বিধি-নিষেধ আরোপ করতে চায়, তাহলে সেটি রাজনৈতিক বিবেচনায় হতে পারে। তবে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় তারা সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তে স্বাগত জানাবেন।
অর্থনীতিবিদ শুভদ্বীপ রক্ষিত বলেছেন, চাল রপ্তানি সীমিত করার সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহগুলোতে দাম কেমন হবে তার ওপর নির্ভর করছে। ধান রোপণ এবং এর ফলনও নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। বর্ষাকালে আবহাওয়া পরিস্থিতি যদি অস্বাভাবিক হয় এবং চালের দাম বেড়ে যায়, তাহলে রপ্তানি বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্তব্য করুন