পোশাক শ্রমিক নেতা কে এই কল্পনা, যাকে নিয়ে কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র
৩ দিন আগে শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
দেশে দেশে শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও শ্রম পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্মারকলিপি ঘোষণার মাঝে উঠে এসেছে বাংলাদেশি শ্রমিক ও শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তারের নাম।
মূলত শ্রম অধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নতুন এই পদক্ষেপ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন। সেসময় সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের কল্পনা আক্তারের উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।
মাত্র ১২ বছর বয়সে পোশাক খাতে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন কল্পনা আক্তার। শৈশব জীবনেই যিনি টের পেয়েছিলেন শ্রমিকের নিদারুণ জীবনের বাস্তবতা। বেড়ে ওঠার সাথে সাথে শ্রমিকের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হন এবং পরবর্তীতে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। শ্রমিক অধিকার নিয়ে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বর্তমানে নিজ কর্মজীবনে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি এই কল্পনা আক্তার।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা কল্পনা আক্তারের মতো মানুষদের সাথে থাকতে চাই। তিনি একজন বাংলাদেশি শ্রমিক এবং শ্রমিক অধিকারকর্মী। কল্পনা বলেছেন, তিনি জীবিত রয়েছেন কারণ মার্কিন দূতাবাস তার পক্ষে কাজ করেছে।’
শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করার কারণে দেশে চাকরি হারাতে হয় তাকে। রানা প্লাজা ধসে দুর্গতদের সহায়তায় তহবিল গঠনের লক্ষ্যে প্রচারণা চালাতে যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলেন কল্পনা আক্তার। শীর্ষ দুই ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘চিলড্রেনস প্লেস’ ও ‘বেনেটন’ থেকে শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করতে গিয়ে নিউজার্সিতে পুলিশের হাতে প্রায় ২৫ জনসহ আটক হন। কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ছাড়া পান কল্পনা আক্তার।
বর্তমানে বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন কল্পনা আক্তার। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) থেকে ২০১৬ সালে সম্মাননা গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তার।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিশ্বজুড়ে যারা শ্রমিক অধিকার হরণ করবে, শ্রমিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং আক্রমণ করবে তাদের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সময়ে শ্রম অধিকার নিয়ে নতুন নিষেধাজ্ঞার বার্তা দিয়েছে যখন বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবিতে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
চলমান এই অসন্তোষের মাঝেই ঢাকা সফর করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শ্রম অধিকার বিষয়ক প্রতিনিধিদল। গত বুধবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহছানে ইলাহীর সাথে বৈঠক করেছে ইইউর এই প্রতিনিধিদল।
সম্প্রতি শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের মাঝে ন্যূনতম মজুরি ৮০০০ থেকে বাড়িয়ে ১২,৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে মজুরি বোর্ড। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অতিরিক্ত দাম, শ্রমিকদের জীবনের মান উন্নয়ন ও সন্তানদের ভবিষ্যতের বিষয়গুলো সামনে এনে ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করেছে শ্রমিকদের একাংশ।
ন্যূনতম ২৫০০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চলমান রেখেছে ‘মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’ নামক একটি প্ল্যাটফর্ম। গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেনসহ গ্রেপ্তার হওয়া সকল শ্রমিকের নিঃশর্ত মুক্তি, শ্রমিকদের ওপর হামলা-মামলা বন্ধ এবং নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তাদের।