৩য় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, একজনের মৃত্যুদণ্ড
২২ দিন আগে শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামে গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তাওহীদা ইসলাম ইলমাকে তেঁতুল খাওয়ানো কথা বলে মুখে ও গলায় ওড়না পেচিয়ে ধর্ষণ শেষে হত্যা করার দায়ে মোহাম্মদ আলী বাপ্পী নামের এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন এ রায় দেন।
মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন, কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গজারিয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান এর নাতি মোঃ জাকারিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী বাপ্পী।
মামলার বিবরণে জানাযায়- ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ বিকেলে ৩টার পর গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তাওহীদা ইসলাম ইলমা (৯) কে খুঁজাখুঁজি করে না পেয়ে মাইকিং করার সিদ্ধান্ত নিলেও পরদিন আসামি মোহাম্মদ আলী বাপ্পি (২১) নিজেই অটোরিকশা ও মাইক ভাড়া করিয়া এলাকায় মাইকিং শুরু করলে বাদীর সন্দেহ সৃষ্টি হয় এবং আসামি মোহাম্মদ আলী বাপ্পীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোন তথ্য না পেয়ে তাঁকে ছেড়ে দেন স্থানীয় লোকজন। এরপর ১৬ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টায় ডাকাতিয়া নদীতে তাওহীদ ইসলাম ইলমা'র মৃতদেহ কাঁথা মোড়ানো অবস্থায় মাসুকা বেগম দেখতে পেয়ে শোর চিৎকার করলে স্থানীয়রা এসে লাশটি নদী থেকে তুলে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে এবং আসামি মোহাম্মদ আলী বাপ্পিকে পুনরায় আটক করে। মোহাম্মদ আলী বাপ্পি হত্যাকন্ডের কথা স্বীকার করে বলে যে, যৌন কামনা চরিতার্থ করার জন্য তেঁতুল খাওয়ানো কথা বলে তার ঘরে নিয়ে মুখে ও গলায় ওড়না পেচিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করার পর গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ কাঁথা দিয়ে পেচিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দেয়। এ ব্যাপারে ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ ভিকটিম তাওহীদ ইসলাম ইলমা'র পিতা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গজারিয়া গ্রামের আব্দুল করিম এর ছেলে মোঃ দেলোয়ার হোসেন (৩৩) বাদী হয়ে একই গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান এর নাতি মোঃ জাকারিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী বাপ্পীকে আসামি করে চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা দায়ের করে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ইকবাল মনির আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৯ সালের ২ জুন আসামি মোহাম্মদ আলী বাপ্পীসহ একই গ্রামের আবুল কালাম এর ছেলে মোঃ মিজান (২২) কে জড়িত করে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
রাষ্ট্র পক্ষে ১০জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে আসামি মোহাম্মদ আলী বাপ্পীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনাক্রমে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোহাম্মদ আলী বাপ্পির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামি মোহাম্মদ আলী বাপ্পিকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অপর আসামি মোঃ মিজান এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালত। রায়ে আরও উল্লেখ করেন যে, মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোহাম্মদ আলী প্রঃ বাপ্পিকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত গলায় ফাঁসির রুজু দ্বারা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যু কার্যকর করার নির্দেশ দেন এবং মৃত্যু দণ্ড প্রাপ্ত আসামি রায় প্রচারের তারিখ হতে ৭ দিনের মধ্যে মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে পারিবেন।
রায় ঘোষণাকালে আসামিদ্বয় আদালত কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষে নিযুক্তীয় বিজ্ঞ কৌশলী স্পেশাল পিপি এডভোকেট প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন- আমরা আশা করছি উচ্চ আদালত উক্ত রায় বহাল রেখে দ্রুত কার্যকর করবেন।