ভিন জাতের ছেলেকে বিয়ে, অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে হত্যা করলেন বাবা
২ ঘন্টা আগে সোমবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৫
ভারতের কর্ণাটকের হুব্বালি তালুকের ইনামভীরাপুর গ্রামে ফের সম্মানরক্ষার নামে এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ভিনজাতের ছেলেকে বিয়ে করায় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ১৯ বছর বয়সী তরুণী মান্য পাতিলকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। রোববার (স্থানীয় সময়) সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত মান্য পাতিলের বাবা বীরানাগৌড়া পাতিল ও তার কয়েকজন আত্মীয় এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করেছে পুলিশ। অস্ত্র হাতে মান্যর ওপর হামলা চালানো হলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। গর্ভে থাকা সন্তানকেও বাঁচানো যায়নি। এই বর্বর ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রামেরই দলিত সম্প্রদায়ের যুবক বিবেকানন্দ দোদ্দামণির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মান্য পাতিলের। মান্য উচ্চবর্ণের পরিবারের মেয়ে হওয়ায় তার পরিবার এই সম্পর্ক ও বিয়ের তীব্র বিরোধিতা করে। তবে প্রায় সাত মাস আগে পুলিশের উপস্থিতিতে এক পুনর্মিলন আলোচনার পর দু’জনের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
পরবর্তীতে নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা গ্রাম ছেড়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে হাভেরি জেলায় বসবাস শুরু করেন। গত ৮ ডিসেম্বর বিবেকানন্দ তার স্ত্রী মান্যকে নিয়ে নিজ শহর হুব্বালিতে ফেরেন। রোববার সন্ধ্যায় মান্যর বাবা ও আত্মীয়রা ঘরে ঢুকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়।
হামলার সময় মান্যকে রক্ষা করতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন এগিয়ে এলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় মান্যকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে ধরওয়াদ জেলার পুলিশ সুপার গুঞ্জন আর্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, “সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ ঘটনায় মান্যর বাবা বীরানাগৌড়া পাতিলসহ প্রকাশ ও অরুণ নামে তিনজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। হুব্বালি গ্রামীণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে, বিবেকানন্দের আত্মীয় বাসবরাজ জানান, কলেজে পড়ার সময় থেকেই মান্য ও বিবেকানন্দের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করা হলেও মান্য বিয়েতে অনড় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি শহরে ফেরার পরই এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাটি ‘সম্মানরক্ষার’ নামে সংঘটিত একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।