যারা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চায় না তারা ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভয় পেয়েছে- ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের
৪ ঘন্টা আগে শুক্রবার, নভেম্বর ৭, ২০২৫
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, যারা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চায় না তারা ডাকসু নির্বাচনে ভয় পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের পরাজয়ের পর তারা জাকসু, চাকুস, রাকসু নির্বাচন বন্ধে কত শত ষড়যন্ত্র করেছে তা শিক্ষার্থীর পাশাপাশি দেশবাসীও দেখেছে। তারা বুঝতে পারছে জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় তাহলে পরাজয়ের ভরাডুবি খেতে হবে। সেজন্য তারা জাতীয় নির্বাচনে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের যেভাবে বিরোধিতা করেছে একইভাবে গণভোটের বিরোধিতা করছে।
ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘সিপাহি-জনতার বিপ্লব আর ছাত্র-জনতার বিপ্লব একই সূত্রে গাঁথা’। সিপাহি-জনতার বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমান নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে হলেও জাতীয় ঐক্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শহীদ জিয়াউর রহমান ও শহীদ গোলাম আজমের জানাজা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জানাজা। এই দুটি জানাজা বলে দেয় তাদের জনপ্রিয়তার পরিধি।
ডা. তাহের বলেন, আমরা বলতে চাই না কিন্তু আমাদেরকে শুনতে হয় আজকের বিএনপি সেই জিয়াউর রহমানের বিএনপি নয়। ‘জনগণের আস্থাশীল হতে হলে আজকের বিএনপিকে জিয়াউর রহমানের বিএনপি হতে হবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘জিয়াউর রহমানের সময় বিএনপি ছিল বড় দল, আজ সেই জায়গায় অবস্থান করে নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী’’। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা জিয়াউর রহমানের অনুসারীরা তার আদর্শ ভুলে গেছে। যার কারণে তারা এখন গণতন্ত্র চর্চা করে না, মানুষের সেন্টিমেন্ট তারা বুঝতে পারছে না, বুঝতে চেষ্টাও করছে না। তারা সংস্কার চায় না। তাদের দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য যিনি সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর তিনি বলেছেন সংস্কার তারা চায় না। ডা. তাহের বলেন, আপনারা না চাইলেও জনগণ চায়। জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝে রাজনীতি না করলে আওয়ামী লীগের মতই পরিণতি হতে পারে। শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার আগে এদেশের জনগণের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী তিনি যখন ক্ষমতা গ্রহন করেছেন তার পর থেকে তিনি জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করেন। গুড গভর্নেন্স দিতে না পারায় ক্ষমতা গ্রহনের দিন থেকেই শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা নষ্ট হতে শুরু করে। ‘শেখ মুজিবুর রহমান গুড ভাষন দিতে পারলেও গুড শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি’। তিনি রাষ্ট্র শাসনের পরিবর্তে রাষ্ট্রের জনগণকে শোষণ করেছেন। বাকশাল কায়েম করে রক্ষীবাহিনী দিয়ে জনগণের ওপর জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে। যার কারণে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনা অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারের নিহত হলেও মানুষ ইন্না-লিল্লাহও পড়েনি। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর তার দলীয় নেতারাও আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও রাজনীতিতে পুনবার্সনের সুযোগ দেন। তিনি মসিউর রহমান যাদু মিয়া, শাহ্ আব্দুল আজিজকেও মন্ত্রীসভায় স্থান দিয়েছেন। একাত্তরে তাদের কী ভূমিকা ছিল দেশবাসী জানে, আমরা বলতে চাই না। তবে জিয়াউর রহমান চেয়েছেন সকলকে নিয়ে ঐক্যমত্যের একটি সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে। জিয়াউর রহমানের সেই আদর্শ আজকের বিএনপি চর্চা করে না।
গণভোট প্রসঙ্গে ডা. তাহের বলেন, সময়ক্ষেপণ করে লাভ নাই, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই হতে হবে। যতই চালাকি করে সময় নষ্ট করা হোক না কেন, আগে গণভোট তারপর জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। নতুবা জনগণ ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের চেতনায় আবার রাজপথে নেমে আসবে। সংকট সৃষ্টি না করে তিনি নভেম্বরের মধ্যে গণভোট সম্পন্ন করে জুলাই সনদের আলোকে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট পরবর্তী ০৭ নভেম্বর সংগঠিত ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব থেকে স্পষ্ট বাংলাদেশের জনগণ যখন যেই ভূমিকা রাখা দরকার তখন সেই ভূমিকা পালনে ঝাপিয়ে পড়ে। দেশের সকল আন্দোলন সংগ্রাম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হলেও চব্বিশের জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে। জুলাই আন্দোলন চলাকালীন একটি রাজনৈতিক দলের মহাসচিব বলেছিলেন, তার দলের কেউ এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নয়। তিনি আরও বলেন, সরকার সংস্কারের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা এবং একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। জুলাই সনদের আদেশ জারি করে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট দিয়ে সরকার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতেই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে বাংলাদেশের ইতিহাসে বারবার বিপ্লব সংগঠিত হবে। বাংলাদেশের রাজপথকে আর রক্তে রঞ্জিত না করতে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহনের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় মহানগরী কার্যালয়ের হলরুমে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর (ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী) এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম প্রমুখ। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, মহানগরীর অফিস সেক্রেটারি কামরুল আহসান হাসান, সহকারী প্রচার সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন, সহকারী মিডিয়া সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন, সহকারী অফিস সেক্রেটারি মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের যেই চেতনা সেই চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। যেভাবে সিপাহি-জনতা নারায়ে তাকবির স্লোগান দিয়েছিল একইভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্লোগান দিয়েছে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ধারক বাহক হচ্ছে নারায়ে তাকবির স্লোগান। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। এবং সব দল ও প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে। কোনো দল বা প্রার্থীর প্রতি অনুগত থাকা যাবে না।
Tweet
ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন