২০২৪ সালেই বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর উদ্বোধন
২১ ঘন্টা আগে শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুতে সংযুক্ত রেললাইনে দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। তাই দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগ আরও সমৃদ্ধ করতে স্বতন্ত্র রেলসেতু করার উদ্যোগ নেয় সরকার।
বর্তমান বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে দ্রুতগতিতে চলছে স্টিল অবকাঠামোর নতুন ডাবল ট্র্যাকের ডুয়েলগেজ লাইনের সেতুটির নির্মাণকাজ। চলতি বছরই সেতুটি উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এরই মধ্যে দৃশ্যমান তিন কিলোমিটার। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারের এ সেতুর কাজ শেষ হলে ট্রেন চলবে ১২০ কিলোমিটার গতিতে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, সেতুটির ওপরের স্টিল অবকাঠামোর কাঁচামাল জাপান থেকে এনে ভিয়েতনামে ফেব্রিকেশন করা হয়। পরে ভিয়েতনাম থেকে এনে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে স্থাপন করা হচ্ছে। ২০২৪ সালেই আগস্ট মাসের মধ্যেই সেতুর বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে। এরই মধ্যে সেতুর স্প্যানে বসানো হয়েছে স্লিপারবিহীন রেললাইন। বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে দেশে প্রথমবারের মতো ব্যবহার হচ্ছে জাপানি আধুনিক ডাইরেক্ট রেল ফ্যাসেনিং প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিতে স্প্যানের ওপর সরাসরি বসানো হচ্ছে লাইন। এতে সেতুর ওপর রেললাইনের স্থায়িত্ব বাড়ার পাশাপাশি কমবে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ৫ শতাংশ। সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি নদীর দুই পাড়ে এগিয়ে চলছে অ্যাপ্রোচ রেলপথ নির্মাণ কাজ। টাঙ্গাইল অংশে অ্যাপ্রোচ রেলপথ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ আর সিরাজগঞ্জ অংশে ৭৫ শতাংশ। সেতুটির ৩ দশমিক ১ কিলোমিটার অংশ এরই মধ্যে দৃশ্যমান। যমুনা নদীর পূর্ব দিকের টাঙ্গাইল অংশ ও পশ্চিম দিকের সিরাজগঞ্জ অংশ মিলে মোট ৫০টি পিয়ারের কাজ শেষ। ৪৯টি স্প্যানের মধ্যে বসানো হয়েছে ৩১টি। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে এটি হবে দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, ২০১৬ সালে বাস্তবায়ন শুরু হওয়া এ প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে ছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। পরে ব্যয় ৭২ শতাংশ বাড়িয়ে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা করা হয়।
প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, দ্রুতগতিতে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এরই মধ্যে তিন কিলোমিটারের বেশি অংশ দৃশ্যমান। আমরা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রকল্পটি উদ্বোধন করবো।
যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুতে বর্তমানে যে রেললাইন রয়েছে, সেখানে রেলের ওজন ও গতির বিষয়ে সীমাবদ্ধতা আছে। এটি মূলত সড়ক সেতু, এ কারণে এ সেতুতে ট্রেন চলাচলে ওজন ও গতি বেঁধে দেওয়া হয়। সেতুতে সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলতে পারে। এ বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। রেলসেতু নির্মাণ হলে ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলতে পারবে। এছাড়া এর ওপর দিয়ে যে কোনো ওজনের মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলতেও বাধা নেই।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান করবে সেতুটি।আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার সমন্বয়ে নির্মিত হচ্ছে নতুন রেলসেতুটি। ফলে সার্কভুক্ত চারটি দেশের সঙ্গে রেলপথে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে স্থাপন হবে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক। যমুনায় নতুন রেলসেতু নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। রেলপথের মাধ্যমে বাড়ানো হবে কনটেইনার পরিবহন। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দ্রুতগামী রেলওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। নতুন রেলসেতুর মাধ্যমে উত্তরবঙ্গে সহজলভ্য হবে গ্যাস সংযোগ।
বঙ্গবন্ধু সেতু ইস্ট (বিবিই) স্টেশন এবং বঙ্গবন্ধু সেতু ওয়েস্ট (বিবিডাব্লিউ) স্টেশন স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার বেজড ইন্টারলিংকিং (সিবিআই) সিগন্যালিং সিস্টেম থাকবে। সেতু বরাবর থাকবে গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন। যেটি সম্পূর্ণভাবে নির্মিত হলে উত্তরবঙ্গ, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে ধরা দেবে বলে মনে করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ভারী পণ্য পরিবহনে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালে ৩০টি ট্রেন চলাচলের একটি পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে থাকবে দুটি কনটেইনার, একটি পেট্রোলিয়াম ও দুটি খনিজপণ্যবাহী। ২০৩৩ সালে পাঁচটি কনটেইনার, একটি পেট্রোলিয়াম ও দুটি খনিজপণ্যবাহী ট্রেন চলবে। ২০৪৩ সালে যমুনা নদীর ওপর দিয়ে ৭০টি ট্রেন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আটটি কনটেইনার, চারটি পেট্রোলিয়াম ও দুটি খনিজপণ্যবাহী ট্রেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের মে মাসে জাপান সফরে যান। সে সময় প্রকল্পটির বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়। প্রকল্পের তাৎপর্য ও গুরুত্ব এবং বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে জাইকার ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতু বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে দুই অংশকে একত্রিত করেছে। বর্তমানে যাত্রীবাহী ছাড়া কোনো ভারী মালবাহী ট্রেন এ সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। সেতুর বর্তমান অবস্থার কথা চিন্তা করেই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেয়।