এই জোনে ভূমিকম্প হওয়া মানে এটি ধংসাত্মক হবেই একসময় : হুমায়ুন আখতার
১৯ দিন আগে শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
আজ শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানীসহ দেশের অনেক অঞ্চল। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৬।
এটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প। চলতি বছর দেশের ভেতর উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে আজকের ভূমিকম্পটিই সর্বোচ্চ মাত্রার।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায়। কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হওয়া ভূমিকম্পের প্রবল দুলুনিতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অনেক মানুষ ঘর ছেড়ে সড়কে নেমে আসে।
শুধু তা-ই নয়, গত ২০ বছরের মধ্যেই এটি সর্বোচ্চ। দেশের ভূমিকম্প গবেষকরা বলছেন, এর আগে সর্বশেষ ২০০৩ সালের ২৭ জুলাই রাঙামাটির বরকোলে ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে।
উৎপত্তি ও মাত্রা বিবেচনায় আজকের ভূমিকম্পকে উদ্বেগজনক বলছেন ভূতত্ত্ববিদরা। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য ও ভূমিকম্প বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ আমাদের কাছে। এটি হয়েছে সাবডাকশন জোনে।
একই জোনে আজকের স্থান থেকে আরো উত্তরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ছয়-সাত মাস আগে ভূমিকম্প হয়েছে। সিলেটেও হয়েছে। এগুলো বড় ভূমিকম্প হওয়ার পূর্ব লক্ষণ। এটা কয়েক বছরের মধ্যেও হতে পারে বা আগামী ৫০ বছরের মধ্যেও হতে পারে।’ গত দুই বছরে হওয়া হালকা থেকে মাঝারি ভূমিকম্পগুলোর বেশির ভাগ সাবডাকশন জোনে হয়েছে বলে জানান হুমায়ুন আখতার।
তিনি বলেন, ‘সিলেট থেকে চট্টগ্রাম বা কক্সবাজার পর্যন্ত জোনকে আমরা বলি সাবডাকশন জোন। সাবডাকশন বলতে একটা প্লেটের নিচে আরেকটা প্লেট তলিয়ে যাওয়া বোঝায়। আমাদের এখানে সাবডাকশন জোনে ইন্ডিয়ান প্লেট বার্মার প্লেটের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হাওর, মেঘনা নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত আমরা যদি একটা কাল্পনিক রেখা টানি তাহলে এই বরাবর ইন্ডিয়ান প্লেট পূর্বের দিকে বার্মা প্লেটের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে।’
পৃথিবীব্যাপীই ভূমিকম্পের জন্য কুখ্যাত সাবডাকশন জোন। হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘২০১৬ সালে নেচার জিও সায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণায় আমরা ১২ বছরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছি, যে পরিমাণ শক্তি সাবডাকশন জোনে জমা হয়ে আছে তা থেকে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে যেকোনো সময়। এই সঞ্চিত বিপুল শক্তি একবারেও বের হতে পারে, আবার আংশিকভাবে বারবারও হতে পারে। তবে পৃথিবীর সাবডাকশন জোনে যেসব ভূমিকম্প হয়ে থাকে সেগুলো সাধারণত ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ শক্তি একবারে বের হয়ে যায়। সাবডাকশন জোনের ভূমিকম্পগুলো খুব ধংসাত্মক হয়ে থাকে। আমাদের সাবডাকশন জোন সক্রিয় এবং এখানে প্রচুর পরিমাণ শক্তি জমা হয়ে আছে। এই সঞ্চিত শক্তি কোনো না কোনো সময় বের হতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
বড় ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য সচেতনতার ওপর জোর দিয়ে হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতির সময় এসেছে। বাংলাদেশের শহর ও অবকাঠামোগুলোকে রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভন নয়। তাই এই মুহূর্ত থেকেই মানুষকে ভূমিকম্পের সময় করণীয় সম্পর্কে সচেতন করতে হবে এবং নিয়মিত মহড়ার আয়োজন করতে হবে।’