কক্সবাজারের পর্যটন উন্নয়নের পরিকল্পনাতেই সীমাবদ্ধ
২ দিন আগে রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
পর্যটননগরী
কক্সবাজার ঘিরে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা এখনো পরিকল্পনায়ই সীমাবদ্ধ। কক্সবাজারকে স্মার্ট নগরীতে রূপান্তরের ২০ বছর মেয়াদি
মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ সবে শুরু হয়েছে।
সে
পরিকল্পনা অনুমোদন শেষে বাস্তবায়নে আরও কত বছর লাগবে
তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অথচ সাশ্রয়ী গণপরিবহন রেলযাত্রায় যুক্ত হয়ে গেছে কক্সবাজার।
আসছে
১ ডিসেম্বর রেলপথে কক্সবাজার যেতে শুরু করবেন দেশি পর্যটকরা। খুব শিগগিরই কক্সবাজার বিমানবন্দরের দ্বিতীয় রানওয়ে খুলে দিলে সমুদ্র ছুঁয়ে বিমান নামবে পর্যটননগরীতে। বর্তমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় একসময় এভিয়েশন হাব হিসেবে পরিণত হবে কক্সবাজার এয়ারপোর্ট।
রেলযাত্রা
উদ্বোধনের দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন এ রেলপথ সারা
দেশের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গেও কক্সবাজার রেলপথ সংযুক্ত করা হবে। তার মানে অল্প সময়ের মধ্যেই কক্সবাজারের সঙ্গে সড়ক, রেল ও বিমান পথে
স্বাচ্ছন্দ্যের ত্রিমাত্রিক যোগাযোগ শুরু হবে।
প্রতিদিন আরও বিপুলসংখ্যক মানুষ পর্যটননগরী কক্সবাজার বেড়াতে যাবে। কিন্তু এই বিপুলসংখ্যক পর্যটকের
বিনোদনে পরিকল্পিত কোনো উদ্যোগ গড়ে ওঠেনি।
উল্লেখ্য,
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজারের পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে প্রণীত হয় একটি মাস্টারপ্ল্যান।
কিন্তু সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবে তা কার্যকর হয়নি।
অবশেষে প্রায় আট বছর পর
২০২১ সালের ডিসেম্বরে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় শুরু হয় নতুন মাস্টারপ্ল্যান
তৈরির কাজ।
সংশ্লিষ্টরা
বলেছেন, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি নাগাদ চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হবে মাস্টারপ্ল্যানটি; যা বাস্তবায়িত হলে
বদলে যাবে কক্সবাজারের উন্নয়নচিত্র। তবে এ মাস্টারপ্ল্যান তৈরির
পাশাপাশি শহরের অন্তর্বর্তীকালীন উন্নয়ন কাজ চলতে থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজারের
আট উপজেলা টেকনাফ, উখিয়া, রামু, সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া ও সি-বিচ
এরিয়ার প্রায় ৭০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রয়েছে মাস্টারপ্ল্যানের আওতায়। এ এলাকাগুলোর রয়েছে
পৃথক বৈশিষ্ট্য। একেকটি এলাকায় একেক ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করার পক্ষে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কুতুবদিয়া থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত প্রায় ৬৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকা হচ্ছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধিক্ষেত্র।
বিশেষজ্ঞরা
বলছেন, পর্যটকরা কক্সবাজারে শুধু সি-বিচ দেখতে
আসেন না। তারা এক বেলা সি-বিচ দেখে আরও বাড়তি বিনোদন ক্ষেত্র খুঁজে বেড়ান। এ ক্ষেত্রে তাদের
যাওয়ার জায়গা খুবই কম। পর্যটকদের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। বিনোদনের জন্য সি-বিচের বাইরেও
নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করা দরকার। বেসরকারি খাত সম্পৃক্ত করে এমিউজমেন্ট পার্কসহ অনেক পর্যটন স্পট ডেভেলপ করা যায়। কক্সবাজারে বহুমাত্রিক পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগানোর এখনই সময়। বাণিজ্যিক ট্রেন যখন এসে গেছে, ব্যাপকহারে পর্যটকও আসবে। এ সম্ভাবনা কাজে
লাগাতে কক্সবাজারে তেমন কোনো প্রস্তুতিই নেই।
বিশেষজ্ঞদের
মতে, টেকসই উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বিপুল বিনিয়োগ
প্রয়োজন, যা অনেক আগেই
করা উচিত ছিল। ২০ বছর মেয়াদি
কক্সবাজার উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজটি দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করে মাঠ পর্যায়ে কাজে নেমে পড়া দরকার। কক্সবাজার ঘিরে ভ্রমণপিপাসু মানুষের মধ্যে যে আবেগ তৈরি
হয়েছে তা যেন দীর্ঘতম
সৈকতের বালিয়াড়িতে মুখ থুবড়ে না পড়ে।