ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরা শুরু ঈদের খুশি বণ্টনে
১০ দিন আগে সোমবার, অক্টোবর ১৪, ২০২৪
৪ এপ্রিল, বিকেল ৪টা। ঈদ-উল-ফেতর উপলক্ষে স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েদের নিয়ে রাজধানীর উত্তরা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এসেছেন রাজিবুল হাসান। যানজট আর পথের অনেক বিপত্তি পেরিয়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছান। তার হাতে- কাঁধে ভারী ব্যাগ। গরমে টপ টপ করে শরীর থেকে ঘাম ঝড়ছে। দেখেই মনে হচ্ছে অনেক ধকল পেরিয়ে সদরঘাট পর্যন্ত এসেছেন। অথচ তার চোখে মুখে বিরক্তির কোনো ছাপ নেই। হাস্যোজ্জ্বল চিত্তে হাতের বোঝাগুলো নিয়ে লঞ্চের দিকে ছুটছেন তিনি। এ যেন নাড়ির টানে ঘরে ফেরা।
রাজিবুল হাসান জানান, গ্রামে বৃদ্ধ বাবা-মা থাকায় সাধারণত সেখানেই ঈদ উদযাপন করতে হয়। ঈদের পূর্ব মুহূর্তে অফিস ছুটি হওয়ার পর পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভিড়ের মধ্যে বাড়ি যেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই সামনে শুক্র-শনিবারের সাথে কদরের ছুটি মিলিয়ে ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে আগেই গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছি।
শুধু রাজিবুল হাসানই নয়, অফিস আদালতে বন্ধ না হলেও পথের ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই পরিবার-পরিজনদের নিয়ে আগেই যাচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে। কেউ কেউ আবার শেষ কর্মদিবস পর্যন্ত অফিস করতে হবে বিধায় পরিবার পরিজনদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন আগে ভাগে। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় বেশ কয়েকদিন আগ থেকেই ঈদ যাত্রা শুরু হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ঘরমুখী মানুষের স্রোত। কারণ বৃহস্পতিবার অফিস করার পর শুক্র ও শনি সাপ্তাহিক ছুটি এবং রোববার শবে কদরের ছুটি। মাঝখানে সোমবার একদিন অফিস তারপর আবার ঈদের ছুটি শুরু। এক্ষেত্রে অধিকাংশ কর্মজীবী বিশেষ করে সরকারি চাকুরীজীবীরা সোমবার দিন ঐচ্ছিক ছুটি নিয়ে নিয়েছেন। ফলে তারা টানা ১০ দিন ছুটি পাচ্ছেন। এ কারণে মূল স্রোত বৃহস্পতিবার শুরু। এক্ষেত্রে লঞ্চ-ট্রেনে যাত্রা তুলনামূলক স্বাস্তির হলেও বাসে বেশ ভিড় দেখা গেছে।
ঢাকা নদী বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ঈদযাত্রায় নৌপথের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। দেশের ৩১টি নৌপথে ১৭৫টি লঞ্চে ঈদযাত্রীদের আনা-নেওয়া করা হবে। ঘরমুখী মানুষকে প্রিয়জনের কাছে পৌঁছে দিতে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস। এবার ঈদে নৌপথে সাড়ে ২২ লাখ যাত্রীর ঢাকা ছাড়ার কথা। ঈদে নৌপথে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হবে না বলে দাবি করছেন মালিকপক্ষ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সদরঘাট টার্মিনাল থেকে দেশের ৩১টি নৌপথে নিয়মিত ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে। তবে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তা দ্বিগুণের বেশি করা হয়েছে। ঈদের আগে-পরের প্রায় ১৫ দিন ছোটবড় মিলিয়ে ১৭৫টি লঞ্চ যাতায়াত করবে। আগে ঢাকা থেকে ৪১টি নৌপথে লঞ্চসহ পণ্যবাহী বিভিন্ন নৌযান চলত। নদী খনন ও ড্রেজিংয়ে অনিয়মের কারণে ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলগামী ১০টি নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে।
ঈদ যাত্রায় নৌপথে যাত্রীর চাপ পড়ে দ্বিগুণের বেশি। তবে এসময় ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সদরঘাট পৌঁছতে গিয়ে বেশ দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীদের। বিভিন্ন এলাকা থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বাস কম থাকায় গুলিস্তান থেকে হেঁটে সদরঘাটে ছুটতে হয় অনেককে।
দেখা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে প্রচুর যাত্রী রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। এতে করে রাজধানীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে বাড়ছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়।
পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা পাঠাতে সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে এসেছেন মো. শাহ জালাল। তিনি বলেন, ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীসহ একত্রেই বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু ঈদের আগে ছুটি ম্যানেজ করতে না পারায় তাদের আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছি। অফিস ছুটি হলে আমি যাব।
পটুয়াখালী যাওয়ার জন্য রাজধানীর সায়েদাবাদে সাকুরা পরিবহনের কাউন্টারে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন আবু মুছা সিকদার। তিনি জানান, কলেজ আগেই বন্ধ হয়েছে পাশাপাশি কোচিংও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই অপেক্ষা না করে বৃহস্পতিবার প্রয়োজনীয় কেনা কাটা সম্পন্ন করে আজই বাড়ি চলে যাচ্ছি। যাতে কোনো ভোগান্তিতে পড়তে না হয়।
কল্যাণপুরের হানিফ পরিহনের বাসের জন্য অপেক্ষমান চাপাইনবাবগঞ্চের এক মহিলা যাত্রী জানান, গত বছর ঈদের মাত্র দু’দিন আগে বাড়িতে গিয়েছিলাম। সময় মতো গাড়ি আসেনি। তাছাড়া রাস্তায় অনেক যানজটের কবলে পড়তে হয়েছে। তাই এ বছর ঈদের পরে ছুটি না নিয়ে আগে ছুটি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।
বরিশাল-পটুয়াখালী-বরগুনাগামী সাকুরা পরিবহনের সহকারি ব্যবস্থাপক মো. আলমাস বলেন, আজ থেকে থেকে ঘরমুখো মানুষের ভিড় শুরু হয়েছে। আজ অনেক মানুষ টার্মিনাল ছেড়েছে। তবে আগামীকাল থেকে আরও বেশি যাত্রী ঢাকা ছাড়বেন বলে জানান তিনি।
দিকে ঈদযাত্রায় আগাম টিকিট কাটা যাত্রীরা গত বুধবার থেকে যাত্রা শুরু করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই কমলাপুরসহ বিভিন্ন স্টেশনে ভিড় বাড়তে থাকে ঘরমুখো মানুষের। তবে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রথম দিন ভিড় কম। ঈদুল ফিতরের আট দিন আগে আগাম টিকিটে এই ঈদযাত্রা শুরু হওয়ায় কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই ভ্রমণ করছেন যাত্রীরা। কয়েকটি ট্রেন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে চলেছে। যাত্রীদের দাবি-সামনের কয়েকদিনে ট্রেনে প্রচণ্ড ভিড় হবে। সে সময় যেন ট্রেনগুলো শিডিউল মেনে চলে। তাহলে মানুষের দুর্ভোগ হবে না।
রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ট্রেন শিডিউল অনুযায়ী চালানো হবে। এজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কোনো কোনো ট্রেনে প্রচণ্ড ভিড় হয়। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই ট্রেন চালাতে হয়। অনেক সময় শুধু নিরাপত্তার কারণে নির্ধারিত গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব হয় না। এতে করে কিছু ট্রেন বিলম্বে চলে। এটাকে শিডিউল বিপর্যয় বলা যায় না।
রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই যেন ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় না হয় সে বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে। এছাড়া যারা অনলাইনে টিকিট পেয়েছেন, তারা যেন সুস্থভাবে ভ্রমণ করতে পারে, সে লক্ষ্যেই কাজ হচ্ছে। কালোবাজারিরা যেন টিকিট নিতে না পারে, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব ব্যবস্থা যাত্রীদের কল্যাণেই নেওয়া হয়েছে। কেউ চায় না, তার সংস্থার মধ্যে দুর্নীতি থাকুক। আমরাও চাই না, রেলের মধ্যে দুর্নীতি থাকুক। কেনাকাটায় সব জায়গাতেই কিছু না কিছু দুর্নীতি থাকে। অনেক নামিদামি জায়গাতেও ক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা দুর্নীতি থাকে। তারপরও চেষ্টা করছি যেন রেলে কোনো ধরনের এ রকম কিছু না থাকে। চেষ্টা করব সব রকম দুর্নীতি বন্ধ করতে।