‘ছেলের লাশ এনে দেন, শেষবারের মতো দেখতে চাই’
২৫ দিন আগে সোমবার, অক্টোবর ৭, ২০২৪
ওমানে অগ্নিকাণ্ডের
ঘটনায় নিহত বাংলাদেশি প্রবাসী হোসেন মিয়াজীর (২২) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক বাবা আব্দুস সালাম
(৭০)। মা নুরজাহানের বিলাপে ভারী আশপাশের পরিবেশ। বার বারই বলছেন, ‘ছেলের লাশ দেশে এনে দেন, শেষবারের মতো দেখতে চাই।
’
ওমানে নিহত হোসেন মিয়াজীর
বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের নিজমেহার গ্রামের যুগী বাড়িতে।
ওমানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর
বুরাইমির একটি সোফা কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। গত ১১ মার্চ ভোর রাতে
ওমানে কারখানায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সৃষ্ট আগুনে নিহতদের একজন তিনি।
পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস
ছিলেন হোসেন। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২০১৯ সালে
তাকে বিদেশ পাঠান বাবা আব্দুস সালাম। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ঋণের দায় কাটিয়ে উঠতে
পারেনি পরিবারটি। এমন পরিস্থিতিতে ছেলের মৃত্যুতে ঋণের দায় ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে
দাঁড়িয়েছে ওই পরিবারের ওপর।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (১৪
মার্চ) বিকেলে হোসেন মিয়াজীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিহতের মা ও বোনেরা আহাজারি করছেন।
বাবা আব্দুস সালাম কথা বলছেন না তেমন। হোসেন নিহত হওয়ার খবরে তার বাড়িতে এসে ভিড় করেছেন
স্বজন-প্রতিবেশীরা।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা
গেছে, হোসেনের বাবা আব্দুস সালাম এক সময় রিকশা চালাতেন। বর্তমানে বয়সের ভারে কাজে যেতে
পারেন না। পরিবারের স্বচ্ছলতার আশায় ২০১৯ সালে হোসেন ওমান যান। করোনাকালীন বেকারত্ব
ও কাগজপত্র বৈধ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত তাদের ৮ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে।
হোসেনের ছোট বোন মরিয়ম আক্তার জানিয়েছেন, ভাইয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শ্বশুরবাড়ি এলাকার এক এনজিও থেকে ঋণ এনে দিয়েছেন তিনি। একটি দুর্ঘটনা তাদের সবাইকে পথে বসিয়ে দিল।
হোসেনের মা নুরজাহান বেগম
বিলাপ করতে করতে বলেছেন, বেশি লাভের আশায় ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি, আজ আমার সব শেষ।
সরকার যেন আমার ছেলের লাশ দেশে এনে দেন, শেষবারের মতো দেখতে চাই।
পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড
কাউন্সিলর মো. মিজানুর রহমান বলেছেন, এ মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। হোসেন
অত্যন্ত বিনয়ী ও কর্মঠ ছিল। তার লাশ দেশে আনতে পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।