দৈনিক ১০ হাজার টাকা আয় নজরুলের চা বিক্রি করে
১৭ দিন আগে সোমবার, নভেম্বর ৪, ২০২৪
কৃষক বাবার ডানপিটে ছেলে ছিলেন নজরুল। পড়াশোনায় মন না থাকলেও ব্যবসার প্রতি ছিল ব্যাপক ঝোঁক। মাত্র দুই হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে চায়ের দোকান শুরু করে এখন দিনের ৭ ঘণ্টায় বিক্রি করেন ৮০ থেকে ১০০ কেজি দুধের চা। এতে আয় হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।
সম্প্রতি শরীয়তপুর সদরের আংগারিয়া বাইপাস সংলগ্ন ‘হাইওয়ে চায়ের আড্ডা’ দোকানের মালিক কাজী নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের হাজতখোলা গ্রামের নুরুজ্জামান কাজী ও আছমা বেগম দম্পত্তির ছেলে কাজী নজরুল ইসলামের এমন সফলতা দেখে এলাকার বেকার যুবকরা যেকোনো ছোট কাজেও মনোনিবেশ করে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
জানা যায়, নজরুল ইসলাম সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে রেফ্রিজারেটর মেকানিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু সেখানে খুব একটা উন্নতি করতে পারেননি। পরে মামার পরামর্শে প্রায় ৭ বছর আগে আংগারিয়া বাইপাসে চায়ের ব্যবসা শুরু করেন। সেময় মাত্র দুই হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মাত্র দুই কেজি দুধের চা বিক্রি করতে শুরু করেছিলেন। এখন ধীরে ধীরে ব্যবসার পুঁজি বাড়িয়েছেন। তার দোকানে পাওয়া যাচ্ছে দুধ চা, দই চা, বাদাম চা, মালাই চাসহ প্রায় ১০ প্রকারের চা পাওয়া যাচ্ছে। তবে সবেচেয়ে সুনাম কুড়িয়েছে ৩০ টাকা দামের মালাই চা।
সুস্বাধু এই চা পান করতে শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলা ও মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ আসেন দোকানটিতে। বিভিন্ন প্রকারের এসব চা তিনি প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা মূল্যে ৩ হাজার কাপের বেশি বিক্রি করেন। বিক্রি থেকে তার দৈনিক আয় হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। চা ছাড়াও নজরুলের দোকানে নিজস্ব তৈরি মালাই আইসক্রিম ও বিভিন্ন প্রকারের সুস্বাধু বিস্কুট পাওয়া যায়। প্রতিদিন মাত্র ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা চা বিক্রি করে বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সাচ্ছন্দে সংসারের খরচ বহন করেন নজরুল।
নজরুলের দোকানে প্রায়ই চা পান করতে আসেন সজিব শিকদার। তিনি বলেন, শরীয়তপুরের মানুষের বিনোদনের জন্য কোনো পার্ক বা মাধ্যম না থাকায় প্রতিদিনই মানুষ আংগারিয়া বাইপাসে আসেন বিনোদনের জন্য। বাইপাস সংলগ্ন হাইওয়ে চায়ের আড্ডা দোকানে মানুষ চায়ের জন্য ভিড় জমায়। নজরুলের চায়ের বেশ সুনাম থাকায় মানুষ ভিড় উপেক্ষা করে চা পান করে। নজরুল আমাদের গ্রামেরই ছেলে। চা বিক্রি করে সে বেশ ভালোই উপার্জন করে।
স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছেন রিপন নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকি বলে তেমন আসতে পারি না নজরুলের চা পান করতে। তবে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের অনুরোধে প্রায়ই আসা হয় সুস্বাধু চায়ের স্বাধ নিতে। নজরুলের দোকানের সব ধরনের চা’ই পান করেছি আমি। সবচেয়ে বেশি মজাদার চা হলো মালাই চা। তবে আমার ছোটো মেয়ে তার দোকানের মালাই আইসক্রিম বেশি পছন্দ করে।
চা বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, এখন আমি প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করি। বাবা-মায়ের ওষুধপত্রসহ ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা ও সংসার খরচ বহন করি। এসব ব্যয় বহন করতে আমার ভালোই লাগে। কারণ আল্লাহ আমাকে দুই হাজার টাকা পুঁজি থেকে এখন প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা আয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আকিবর খান বলেন, নজরুল হাইওয়েতে চা বিক্রি করে। চায়ের স্বাধ ও গুণাগুণে রক্ষায় সে বেশ মনোযোগী। আর এই জন্যই তার দোকানের চা পান করার জন্য মানুষ ভিড় করে। চা বিক্রি করে পরিবার নিয়ে বেশ ভালোই জীবন কাটছে নজরুলের।