ভারতের
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে গত
মাসের পাঁচ তারিখে ২০১৯
বিশ্বকাপের ফাইনালের পুনরাবৃত্তি দিয়ে শুরু হয়েছিল
বিশ্বকাপের ১৩তম আসর। দশ
দল নিয়ে শুরু হওয়া
এই বৈশ্বিক আসর এসে ঠেকেছে
দুই দলে। আহমেদাবাদেই স্বাগতিক ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার
মধ্যকার ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে
এই বিশ্বকাপের। চরম উত্তেজনাকর এই
ম্যাচে আসরের সেরা দলের মুখোমুখি
হচ্ছে বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা দল।
এবারের
আসরে এখন পর্যন্ত দুইদলের
সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে,
বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা একটি ফাইনাল
দেখতে যাচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। এখন পর্যন্ত মোট
পাঁচবার বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। আগামীকাল তাদের হেক্সা মিশনের চূড়ান্ত লড়াই। অপরদিকে দুইবার বিশ্বজয় করেছে ভারত। তাদের সামনে তৃতীয় শিরোপা হাতে নেওয়ার সুযোগ।
এই ফাইনালের মঞ্চ ভারত বা
অস্ট্রেলিয়া কোন দলের জন্যই
অপরিচিত নয়। নিশ্চতভাবে অস্ট্রেলিয়ার
জন্য তো নয়ই, অষ্টমবারের মতো তারা ফাইনালের
মঞ্চ মাতাবে। কলকাতা, লন্ডন, জোহানেসবার্গ, বার্বাডোস এবং মেলবোর্নে তারা
বিশ্বকাপ তুলেছে এমনভাবে যেভাবে বাচ্চারা তাদের খেলনা সংগ্রহ করে। অনেক দলের
জন্য বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা একটি উপলক্ষ।
অস্ট্রেলিয়ার জন্য, এটি জীবন ধারণের
একটি উপায়। তবে এবার এই
বিন্দুতে তাদের যাত্রা অনিশ্চয়তার মধ্যেই ছিল।
বিশ্বকাপে
তারা তাদের প্রথম দুটি ম্যাচই হেরেছে,
৩৮৮ রান করার পরেও
প্রায় হারতে বসেছিল, ২৯২ রান তাড়া
করতে যেয়ে ৯১ রানে
৭ উইকেট হারিয়ে হারতে বসছিল এবং সেমিফাইনালের প্রথম
ঘন্টার মধ্যে তাদের প্রতিপক্ষকে ২৪/৪ করার
পরও প্রায় হারতে বসছিল। তবুও তারা সব
বাধা অতিক্রম করে ফাইনালে প্রায়
চ্যাম্পিয়নও তারা। এটি এমন এক
বছরে যে বছরে তারা
ইতিমধ্যেই অ্যাশেজ ধরে রেখেছে এবং
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপও ঘরে তুলেছে, ক্রিকেট
খেলার প্রতিটি ফরম্যাটে তিন বছরের বিশ্ব
শিরোপা পূর্ণ করতে তাদের দরকার
শুধু আগামীকালের ফাইনাল জয়। পারবে তো
কামিন্সরা?
তবে
বিশ্বকাপের সাথে অজিদের এতো
ইতিহাস থাকার পরেও প্যাট কামিন্স
এবং তার দল স্বীকার
করবে যে তাদের প্রতিপক্ষ
ফাইনালে ফেভারিট হিসাবে শুরু করবে এবং
শুধুমাত্র এই কারণে নয়
যে তারা স্বদেশী দর্শকদের
সামনে ঘরের মাঠে খেলবে।
এমনকি যারা সাধারণত ভারতীয়
দলের বিরুদ্ধে থাকেন তারাও ভারতের এই দলের ক্রিকেটের
এই সংস্করণে যে নির্ভুলতা এবং
আগ্রাসণের সাথে কাজ করেছে
তার প্রশংসা করবে। এই ভারতীয় দলের
সাথে অনেকেই ২০০০ সালের পরের
সব জয় করা বিখ্যাত
অস্ট্রেলিয়া দলের সাথে মিল
পাবেন।
এখানেই
রোহিত শর্মা-রাহুল দ্রাবিড়ের কৃতিত্ব। এই ক্যাপ্টেন-কোচ
জুটি একটি দলের সাফল্যের
জন্য আক্রমণাত্মক ব্র্যান্ডের খেলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ
তা লুকানোর কোনও চেষ্টা করেনি
,একটি দলে সবার সুনির্দিষ্ট
ভূমিকা এবং অসামান্য ব্যক্তিগত
প্রতিভা দিয়ে ভারতকে অজেয়তার আভাস দিয়ে রেখেছেন।
তবে
দ্রাবিড় এবং রোহিত কথা
নয় কাজে দেখাও মনোভাবে
বিশ্বাসী। বলিউডের সিনেমায় দেখানো হয় যোগ্যতার পিছনে
ছুটতে কিন্তু বাস্তব জীবনে এখনও সাফল্য মাপা
হয় সার্টিফিকেট এবং ট্রফি দিয়ে
এটি দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি। ভারতের
সর্বকালের সেরা ওয়ানডে দল
হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে, রোহিতকে
কপিল দেব এবং মহেন্দ্র
সিং ধোনির মতো অধিনায়কদের সারিতে
রাখার জন্য শুধু স্কোরকার্ড
এবং পরিসংখ্যান দিয়ে হবে না।
সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রোহিতের অসাধারণ অধিনায়কত্বের গল্প, শামির প্রথম বলে উইকেট, কোহলির
দুর্দান্ত শতক, রোহিতের প্রায়
১০০ এবং বুমরাহর জাদুকরী
বোলিংকে ইতিহাসের পাতায় ভালোভাবে স্মরণ করা হবে যদি
আগামীকাল ট্রফিটি রোহিতের হাতে উঠে। ভারতের
অবশ্যই সাফল্যের কোন ঐশ্বরিক অধিকার
নেই এবং অধিনায়ক এবং
কোচ একমত হবেন যে
তারা কেবল পরিবর্তনের পথ
প্রশস্ত করতে পারেন। তবে
এখন ভারতের এই দলের নিখুঁত
সমাপ্তির স্ক্রিপ্ট করার সর্বোত্তম উপায়
হল মাঠে জবাব দেয়া।
এই দুই হেভিওয়েটের চেন্নাইতে
তাদের ম্যাচ শুরু না করার
আগ পর্যন্ত এই বিশ্বকাপটি খুব
একটা দৌড়াতে পারেনি। এই দুইদলের তাদের
চূড়ান্ত বক্তব্য না পাওয়া পর্যন্ত
এটি শেষ হবে না।
মোতেরা থেকে খালি হাতে
ফিরে আসা অধিনায়কের কীর্তি
হতাশায় আবদ্ধ হবে আর অপর
অধিনায়ক একটি ১১ কিলো
ভরের সোনা এবং রৌপ্যর
প্রলেপ দেওয়ায় ট্রফি দিয়ে লোকগাঁথায় অমরত্ব
পাবে।