কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে শিল-পাটা
২৭ দিন আগে শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
গাজী কুদ্দুছুর রহমান সোহাগ :স্টাফ রিপোর্টার
কুমিল্লার
বুড়িচং উপজেলায় এক
সময় গ্রামের পাড়া-মহল্লায় বাড়ির সামনে দিয়ে উচ্চস্বরে বলতে শোনা যেতো ‘লাগবে...শিল-পাটা ধার, তালা-চাবি সারা’ এখন আর তেমন হাঁক-ডাক শোনা যায় না। কালের বিবর্তনে ডিজিটাল যুগের কাছে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামগঞ্জের গৃহিণীদের মসলা বাটা পাথরের এ শিল-পাটা।
এক
সময় মসলা বাটার জন্য এই শিল-পাটা
ছিল একমাত্র ভরসা। গ্রাম বাংলার মানুষের বাড়িতে হলুদ, মরিচ, আদা, রসুন ও নানা রকমের
ভর্তা বানাতে ব্যবহার হতো পাথরের শিল-পাটা। কিন্তু বর্তমান যুগে গৃহিণীদের আর শীল পাটায়
খুব একটা মসলা পিষতে হয় না।
এখন
হাত বাড়ালেই বাজারে মিলছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে হরেক কোম্পানির বিভিন্ন রকমের মসলা বাটা। অথচ যুগ যুগ ধরে বাড়ির গৃহিণীদের কাছে নিত্য দিনের সঙ্গী ছিল মশলা পেষার এই শিল-পাটা।
এমনকি বিয়ে বাড়ি থেকে শুরু করে যে কোনো অনুষ্ঠানে
সারিবদ্ধ হয়ে শিল-পাটা নিয়ে মসলা বাটার কাজে লেগে যেতেন গৃহবধূরা। এই বাটা মসলা
দিয়েই চলতো অনুষ্ঠানের রান্নাবান্না। যন্ত্র আর সমাজ-সভ্যতার
বিবর্তনে হারাতে বসেছে শিল-পাটা ও তালা-চাবি
মেরামতের এ পেশা।
সোমবার
দুপুরে বুড়িচং সদরে হরিপুর গ্রামের শিল-পাটা খোদাই করার কাজে ব্যস্ত রফিক মিয়া (৪৫)। কথা
হয় তার সাথে। তিনি বলেন, তার স্থায়ী বাড়ি পাবনার চাটমোহর উপজেলার সমাজ গ্রামে। আগে পৈতৃক পেশা কৃষিকাজ করতেন। স্ত্রী, ২ ছেলে ও
এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। তবে তারা বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন।
রফিক মিয়া
আরও বলেন, এক সময় ঘরে
ঘরে শিল-পাটা ছিল রান্নার মসলা বাটার অন্যতম উপায়। প্রতিটি পরিবারে শিল-পাটার ব্যবহার ছিল ব্যাপক। কিন্তু কালের বিবর্তনে বাঙালির সমাজ ব্যবস্থার পারিবারিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিল-পাটার ব্যবহার। এখন গ্রামের প্রায় প্রতিটি হাট বাজারে মশলা গুঁড়ো করার মিল গড়ে উঠেছে। মধ্যম আয়ের প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে ব্লেন্ডার মেশিন। একারণে আগের মতো আয়-রোজগার হয়
না। ছোট বড় মানভেদে ৩০
থেকে ৪০ টাকায় শিল-পাটা খোদাই করেন তিনি। প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৫টির
মতো খোদাই কাজ করে তার আয় ৪০০ থেকে
৫০০ টাকা। রোজগার কম বলে ৩/৪ মাস পর
পর বাড়ি যান রফিক মিয়া । যে এলাকায় কাজের
সন্ধানে প্রবেশ করেন সপ্তাহ খানেক কোথাও অবস্থান করে ফেরেন বাড়িতে। খাবার, গাড়িভাড়াসহ দৈনিক রফিক মিয়ার খরচ ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। রোজগার কম বলে খুড়িয়েই
চলছে তার সংসার।
তিনি
বলেন, গ্রামের প্রতিটি ঘরে এক সময় শিল-পাটা থাকলেও এখন তেমন একটা চোখে পরে না। এ কারণে রোজগারও
কমেছে রফিক মিয়ার। বাধ্য হয়ে এ পেশার পাশাপাশি
তালা-চাবি মেরামতের কাজও করেন তিনি। জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়েই বিলুপ্ত প্রায় দুই পেশাকে এক করেছেন তিনি।
বুড়িচং
উপজেলার এরশাদ ডিগ্রী কলেজের প্রফেসর প্রদীপ ভট্টাচার্য জানান, শিল-পাটা ধার, তালা-চাবি মেরামত পেশার এক সময় কদর
থাকলেও এখন এ পেশা বিলুপ্তির
পথে। মূলত যান্ত্রিক সভ্যতার কাছে এ পেশা টিকতে
পারছে না। তবে বিলুপ্ত প্রায় এ পেশা টিকিয়ে
রাখতে পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।