দিনমজুর বাবার দুই মেয়ে এখন বিসিএস ক্যাডার

Bortoman Protidin

২ ঘন্টা আগে সোমবার, ডিসেম্বর ৮, ২০২৫


#

 আবদুল হান্নান পেশায় দিনমজুর। পাঁচ কাঠা জমি আর টিনের ছাপরার একটি ছোট ঘরেই ছয় সদস্যের পরিবারের ঠিকানা। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলে কোনোরকমে। তবে আর্থিক সংকটের মধ্যেও মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করেননি তিনি। তাঁর স্ত্রী গৃহস্থালি সামলানোর পাশাপাশি সব সময় মেয়েদের পড়াশোনায় উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। অনেক কষ্ট ও সংগ্রামের পথ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত এ দম্পতির দুই মেয়ে বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। মাবাবা ও ভাইবোনদের নিয়ে এখন তাঁরা সেই পরিশ্রমের আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন।

আবদুল হান্নানের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে। তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে। বিসিএস ক্যাডার হওয়া দুই মেয়ে হলেন মোসা: সারমিন আক্তার ও মোসা: খাদিজা আকতার। ছোট বোন খাদিজা ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন। এবার বড় বোন সারমিন ৪৪তম বিসিএসে পশুসম্পদ ক্যাডার পেয়েছেন। দুই বোনের ভাষ্যমতে, তাঁদের এ অবস্থানে আসার পেছনে মায়ের অবদানই সবচেয়ে বেশি।দুই মেয়ের সাফল্যে মাবাবার আনন্দ সীমাহীন। বাবা আবদুল হান্নান বলেন, ‘কষ্ট কর‍্যাছি, মেয়েরা বাপমায়ের কষ্টের মর্ম বুঝ্যাছে। তারা সফল হয়্যা দ্যাখিয়্যা দিয়াছে। বাপমাকে সম্মানের জাগাতে লিয়া গেছে। গাঁয়ের মানুষ হামারঘে এ্যাখুন অনেক সম্মান দ্যাখায়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দ্যায়।

সারমিন খাতুন ২০০৮ সালে বালিয়াডাঙ্গা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ৫ পান। একই বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে জিপিএ৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন খাদিজা খাতুন। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই দুই বোনের গল্প নিয়ে প্রথম আলোর অদম্য মেধাবী সিরিজে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপর সারমিন পান ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিলের শিক্ষাবৃত্তি এবং খাদিজা পান হামদর্দ লিমিটেডের সহায়তা।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগে ভর্তির পর ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিলের বৃত্তির টাকাই ছিল সারমিন খাতুনের মূল ভরসা। ছোট বোন খাদিজাও ভর্তির সুযোগ করে নেন একই বিভাগে। তখন বৃত্তির টাকা ভাগাভাগি করে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন দুই বোন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সারমিনের জন্য বরাদ্দ সিঙ্গেল সিট ব্যবহার করতেন ছোট বোন খাদিজা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে। একই বিষয়ে পড়ায় দুজনের জন্য আলাদা করে বইপত্র কিনতেও হয়নি।

কঠিন পথ পেরিয়ে বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় সারমিন বলেন, ‘আমাদের পরিবারের কষ্টের পথ অনেক লম্বা ছিল। প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তির সহায়তা ও মাবাবার ত্যাগ না থাকলে আজকের অবস্থানে আসা সম্ভব হতো না।স্থানীয় মানুষ দুই বোনের অর্জনকে এলাকার মেয়েদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন বলে জানালেন শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, দিনমজুর বাবার ঘামঝরা কঠিন পরিশ্রম ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও বড় হওয়া সারমিন ও খাদিজা আজ বিসিএস ক্যাডার। তাঁদের গল্প কেবল একটি পরিবারের নয়, এটি প্রমাণ করে যে সুযোগ, সহায়তা ও দৃঢ়সংকল্প থাকলে দারিদ্র্যও শেষ পর্যন্ত হার মানে। গ্রামের ছোট্ট ঘর থেকে সারমিনদের পথচলা শুরু। বাবা দিনমজুর হলেও তাঁর জেদ ছিল মেয়েদের পড়াশোনা যেন থেমে না যায়। মা ছিলেন সেই জেদের বড় শক্তিমেয়েদের পড়ার সময় কোনো বাধা না আসে, তা তিনি নিশ্চিত করতেন। এখন গ্রামের মানুষ এই বাবামাকে সম্মান করে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়। দুই বোন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পর প্রয়াত শিক্ষক সিদ্দিক আহমেদের নামে গড়ে ওঠা সংগঠন ‘সিদ্দিক আহমেদ শ্রদ্ধা নিবেদন পরিষদ তাঁদের সংবর্ধনার আয়োজন করে।

আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তি শুধু খাতাকলম বা পরীক্ষার ফি নয়, সারমিনের জীবনে উচ্চশিক্ষার দরজা খুলে দেয়। এই সহায়তায় তিনি পার করেছেন উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়, সঙ্গে এগিয়ে নিয়েছেন ছোট বোনকেও। পরিশ্রম ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। সীমাবদ্ধতার মধ্যেই রাতজাগা পড়া, বই সংগ্রহ ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতিসবই করেছেন সারমিন। শেষ পর্যন্ত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি।

কুপির আলোয় পড়ার জন্য যখন কেরোসিন তেল কিনতে পারতেন না, তখন প্রতিবেশীর বাড়ি গিয়ে বিদ্যুতের আলোয় পড়েছেন বলে জানান সারমিন আক্তার। সেই প্রতিবেশী আত্মীয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বালিয়াডাঙ্গা ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রয়াত সহকারী শিক্ষক মোখলেসুর রহমান, বালিয়াডাঙ্গা উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষানুরাগী, প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ।

সারমিন আক্তার বলেন, ‘আমার অর্জন শুধু আমার নয়, আমার মাবাবারও। তাঁদের ত্যাগ না থাকলে কিছুই সম্ভব হতো না। আর প্রথম আলো ট্রাস্ট আমাকে যে সহায়তা দিয়েছে, সেটা ছিল এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি। প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেওয়া খাদিজা আকতার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন মাবাবার জন্য আমরা গর্ব করি। আর বড় বোনের ছত্রচ্ছায়ায় আমি লেখাপড়া এগিয়ে নিতে পেরেছি।

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন  
#

কোতোয়ালী মডেল থানায় অস্থায়ী ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ

#

প্রবাসী শ্রমিকদের ভোগান্তি নিরসনে কাজ করছি : আইন উপদেষ্টা

#

পহেলা বৈশাখে এবার ইলিশের সরবরাহ কম,দামও বেশি

#

তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনে কোনো বিধি নিষেধ কিংবা আপত্তি নেই: প্রেস সচিব

#

বাংলাদেশিদের ভিসা চালুর বিষয়ে অগ্রগতি হওয়ায় ইউএই'কে ধন্যবাদ প্রধান উপদেষ্টার

#

উপজেলা নির্বাচনের ১ম ধাপে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আজ শেষ দিন

#

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় : সেনাপ্রধান

#

মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরশায়িত হাসান আরিফ

#

লন্ডন যাত্রায় খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী যে ১৪ জন, জানাল বিএনপি

#

অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন: তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ

Link copied