শিউলির পৌষ মাস,ঠান্ডায় বিক্রি বেড়েছে খেজুর গুড়ের
২০ দিন আগে সোমবার, ডিসেম্বর ২, ২০২৪
পৌষের শেষ লগ্ন থেকে কনকনে ঠান্ডায় কাঁপছে বঙ্গ। তা যেন হঠাৎই আশীর্বাদ বয়ে এনেছে শিউলিদের (খেজুর রস দিয়ে যাঁরা গুড় তৈরি করেন) কাছে। ক’দিন আগেও সে ভাবে ঠান্ডা না-পড়ার জন্য যাঁরা আক্ষেপ করছিলেন, এখন তাঁদের মুখে চওড়া হাসি।
এই শীতে খেজুর রস হয়ে উঠেছে কাচের মত স্বচ্ছ। সেই রস দিয়ে শিউলিরা বানাচ্ছেন সুগন্ধী গুড়। পিঠেপুলি বানানোর জন্য সেই গুড় কিনতে গৃহস্থের ভিড় জমছে ‘শাল’-এর (শিউলিদের অস্থায়ী আস্তানা) সামনে।
শিউলিরা জানান, মরসুমের শুরুতে সে ভাবে ঠান্ডা না পড়ায় রসের জোগান যেমন কম ছিল, গুণমানও সেই রকম ছিল না। বিক্রিবাটাও বিশেষ জমেনি। কয়েক দিনের হাড়কাঁপানো শীতে পরিস্থিতি বদলেছে।
স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে বাগনানের খাদিনানে আস্তানা গেড়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির শিউলি সুশান্ত নায়েক। ৩০০টি গাছ জমা নিয়েছেন তিনি। সোমবার, পৌষ সংক্রান্তির জবুথবু ঠান্ডার দুপুরে শালে বসে উনুনে বসানো কড়াইভর্তি খেজুর রসে জ্বাল দিচ্ছিলেন সুশান্ত। বললেন, ‘‘কয়েক দিন জোর ঠান্ডা পড়ায় ভাল রস পাচ্ছি। গুড়ের বিক্রি বেড়েছে। মনে হচ্ছে, যে ঘাটতি ছিল, তা পূরণ করতে পারব।’’
বস্তুত, কালীপুজোর পরেই শুরু হয় খেজুর গুড়ের মরসুম। শিউলিরা বেরিয়ে পড়েন বাড়ি ছেড়ে। হাওড়া জেলায় যে সব শিউলিদের দেখা যায়, তাঁরা মূলত আসেন খেজুরি থেকে, সপরিবারে। একচিলতে জায়গা ভাড়া নিয়ে খেজুর গাছের পাতা দিয়ে বানিয়ে ফেলেন অস্থায়ী কুঁড়েঘর। পাশেই তৈরি করেন বিশাল উনুন। যাঁদের বাড়িতে বা বাগানে খেজুর গাছ আছে, তাঁদের সঙ্গে চুক্তি হয়। গাছ প্রতি তিনশো টাকা অথবা তিন কিলোগ্রাম খেজুর গুড়। এক জন শিউলি অন্তত তিনশো গাছ জমা নেন। গাছের ডগায় হেঁসো দিয়ে চেঁচে তাতে বাঁশের নলি গেঁথে দেওয়া হয়। নলির মুখে ঝুলিয়ে রাখা ভাঁড়ে সারারাত ধরে রস চুঁইয়ে পড়ে। সেই রস জ্বাল দিয়েই তৈরি হয় গুড়। ঠান্ডা যত বাড়ে, রসের পরিমাণ এবং গুণমান দুই-ই বাড়ে। স্বাদ বাড়ে গুড়ের।
অনেকে শিউলির থেকে ভোরবেলায় খেজুর রস কিনে খান। তবে, গুড় আর পাটালির চাহিদাই বেশি। শিউলিরা জানান, গুড় বেচে চার মাসে ভালই লাভ হয়। তাই এই সময়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বাকি সময় চাষবাস করেন। অনেক শিউলির ১০০ দিন প্রকল্পের জব কার্ড রয়েছে। কিন্তু দু’বছর ধরে ওই কাজ বন্ধ। এই অবস্থায় গুড়ের কারবার তাঁদের বড় সহায়। কিন্তু মরসুমের শুরুতে কম ঠান্ডায় তাঁরা বিপাকে পড়েছিলেন। ক’দিনের জাঁকিয়ে শীত দুর্ভাবনা কাটিয়েছে।
ক্যালেন্ডারে মাঘ। শিউলিদের এখনও পৌষ মাস চলছে।