জমে উঠেছে রাউজানে মানুষ বিক্রির হাট
১৯ দিন আগে শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
বোরো মৌসুমকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের রাউজানে জমে উঠেছে মানুষ বিক্রির হাট। এখানে গিয়ে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন জায়গা হতে অভাবী লোকজন ছুটে এসেছেন নিজেকে বিক্রি করতে এই হাটে। তাদের চোখে-মুখে হাজারটা অসহায়তার ছাপ। এই হাটে কেউ আসেন বিক্রি হতে আর কেউ আসেন মানুষ কিনতে। এখানে চলে দুই শ্রেণির মানুষের মাঝে চলে ব্যাপক দরদাম নিয়ে। বাজারের পণ্যের মতো নিদিষ্ট দামে বিক্রি হয় এই হাটের মানুষ গুলো।
উপজেলার ফকিরহাট বাজারে সবচেয়ে বড় শ্রমিকের হাট বসে। এছাড়ও এই বাজার ছাড়া রাউজানে আরও কয়েকটি হাটে মানুষের হাট বসতে দেখা যায়। তার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী হাট গৌরীশংকর হাট, রমজান আলীর হাটসহ বেশকিছু হাটে কাজের জন্য মানুষ বিক্রি হয়। তবে সবচেয়ে বড় হাট বসে পৌরসভার ফকিরহাট বাজারে। প্রায় সারা বছরই এ হাটে মানুষ বেচাকেনা হলেও বিভিন্ন চাষের মৌসুমকে ঘিরে এসব হাটের পরিধি বাড়ে অনেকগুণ। এখানে যারা শ্রম তথা নিজেদের বিক্রি করতে আসেন তারা প্রায় সকলেই দরিদ্র শ্রেণির লোকজন।
ফকিরহাট উপজেলার বাজার ডাকবাংলোর সামনে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ বসে থাকে গৃহস্থির অপেক্ষায়। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ হাট। তবে সপ্তাহের রোববার ও বৃহস্পতিবার হাটের দিন বেশি জড়ো হতে থাকে এসব মানুষ। এখানে নিম্ন আয়ের কৃষি শ্রমিকের পাশাপাশি রাজমিস্ত্রী, মাটি কাটা, খোঁয়া ভাঙা সহ বিভিন কাজের জন্য মানুষ পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৫ থেকে ৬শ জন মানুষ এখানে আসে শ্রম বিক্রির উদ্দেশ্যে। পণ্যের মত দর কষাকষিতে বিক্রি হওয়া শ্রমজীবী এসব মানুষকে নিয়ে প্রয়োজন অনুসারে কাজ করানো যায়।
এখান থেকে ক্রয় করে নিয়ে যাওয়া হয় রাউজান, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাঙ্গুনীয়াসহ উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায়। এ মানুষগুলো দু’বেলা রুটিরুজির জন্য নিজেকে দিন বা কাজের চুক্তির ভিত্তিতে বেঁচে দেন মানুষের হাটে।
ধান রোপনের শ্রমিক ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা, বেতন দেওয়ার পাশাপাশি দুই বেলা খাবার ও চা নাস্তা খেতে দেওয়া হয়। কৃষিজমি নিরানি শ্রমিক ৫ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা, মাটি কাটার জন্য ৬শ টাকা, রাজমিস্ত্রী ৮শ টাকা ও তাদের সহযোগী ৫শ টাকা।
হাটে শ্রম বিক্রি করতে আসা একজন আবুল হোসেন তিনি ভোরের ডাককে জানান, অভাবের সংসার, বাধ্য হয়ে কাজ করতে হাতিয়া থেকে এখানে এসেছি। অপেক্ষায় আছি কবে বিক্রি হয়ে মানুষের কাজে যোগদান করে কিছু টাকা রোজগার করবো।
তিনি বলেন, এলাকায় কৃষি কাজ করেন আর প্রতিবছর ধানের কাজের মৌসুম আসলে ধানের কাজ করতে চট্টগ্রামে চলে আসেন। সিলেট থেকে আসা রহিম উল্লাহ জানান, স্ত্রী-সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য যুদ্ধে এসেছি। এখান থেকে খালি হাতে বাড়ি ফিরলে পরিবারের সদস্যদের কষ্টের দিন পার করতে হবে বরে তিনি জানান।
তবে এখানে মানুষ কিনতে আসা লোকজন বলছেন, এবছর মানুষের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। তবে কাজ যেহেতু করতে হবে দাম বেশি হলেও কিছু করার নেই। ফকিরহাটে এ মানুষ কেনাবেচার হাট ভোর থেকে সকাল ১০টা পযর্ন্ত বেশ সরগরম থাকলেও দিনশেষে অনেকেই থেকে যায় অবিক্রিত। তাদের অপেক্ষা করতে হয় পরেরদিনের আরো একটা সূর্যদয়ের জন্য।